Saturday, August 2, 2008

ফিজির মাটিতে প্রথম শারদীয়া দুর্গোৎসব…

আমার অরকুট এর এক প্রবাসের বান্ধবী যখন জানিয়েছিলেন যে তিনি কোনো এক পত্রিকায় লেখা পড়েছিলেন "ফিজিতে দুর্গাপ্রতিমা (ছবি সহ) রওনা দিলো”। আমি তৎক্ষণাৎ তার কথা ধূলিসাৎ করে বলি চোখের পাওয়ারটা ঠিক করো ওটা নিশ্চয় ফুজি হবে ফিজি না । আর তার ঠিক পাঁচ সপ্তাহ পরেই হঠাৎই একদিন স্বামীজীর ফোন সৌমেনকে “সন্ধ্যায় চলে আসুন কথা আছে” । আশ্রমে গিয়ে চমকিত হলাম মা দুর্গাকে দর্শন করে । এক চালচিত্রের ভিতরে মা তার চার পুত্র কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ী এসেছেন । ওই আশ্রমে তখন বেশ কিছু গুজরাটি পরিবারকে নিয়ে স্বামীজী নবরাত্রির ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন । সেইখানেই তিনি সৌমেনকে পুজোর ভার দিলেন । সৌমেন যত না খুশি তার থেকে বেশী নার্ভাস যে স্বামীজীর উপস্হিতিতে তাকে পুজো করতে হবে । আমাদের ওপরেরই ভার দিলেন ওখানে যত বাঙালী ও অবাঙালী আছে তাদের বলার জন্য । উনি নিজে ভারতের হাই কমিশনার শ্রীযুক্ত ঝাঁ কে নিমন্ত্রন করার ভার নিলেন। আর মায়ের ভোগের ব্যাপার আমাদের ওপরেই ছেড়ে দিলেন । তবে ওনার একটি ইচ্ছা জানালেন যে খিচূড়ির সাথে লম্বা লম্বা বেগুন ভাজা থাকবে । আমরা লাউটোকাতে দুটি বাঙালী পরিবার…আমরা আর সঞ্জয় ,বেবী ও তাদের ৭ বছরের পুত্র অনুভব। আমরা দুই পরিবার সকলকে নিমন্ত্রন করার, বাজার করার ভার নিলাম। সুভাতে যদিও বেশ কিছু বাংলাদেশের হিন্দু পরিবার আছেন কিন্তু তাদের নিজেদের অনুষ্ঠান থাকে।তাই তারা লাউটোকা আসার ব্যাপারে তাদের অক্ষমতা জানালেন। তাদের কাছে পুজোর চেয়ে বেশী আনন্দ তাদের নিজেদের ঘরোয়া অনুষ্ঠান। সুভা থেকে ৪টি পরিবার, বা থেকে ২টি পরিবার, নান্দী থেকে ১টি পরিবার ও রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামীজী এসেছিলেন। একটা কথা বলে নিই এই পুজোতে আমাদের সাথে লাউটোকার অন্য ভারতীয়রা এত সাহায্য করেছিল যে বলে শেষ করা যাবে না।

শুরু হয়েছিল অমাবস্যার একদিন পর থেকেই । আমাদের দুর্গা পুজো স্থির হলো নবমীর সন্ধ্যায়,শনিবার। আমরা দুই বাঙালী পরিবার রোজই সন্ধ্যাবেলা একবার করে মাকে দর্শনের লোভে আশ্রমে যেতাম। সেখানে আরতি হতো, পরে গরবা ও ডান্ডিয়া নাচ।গুজরাটিরা অম্বা মায়ের পুজো করতেন, অম্বা মা দূর্গার ই আর এক রূপ। মা দুর্গার প্রতিমার নীচেই অম্বা মাকে রাখা হয়েছিল। ওইখানেই আমি ও বেবী রোজ আলোচনা করেছি কী মেনু কতটা পরিমানে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সকলের সহযোগিতা ও উৎসাহে মায়ের ভোগ রান্না করা হলো। মেনু হলো লুচি, আলুর দম, খিচূড়ি, বেগুন ভাজা, লাবরা, চাটনী, পায়েস, গুলাব জামন, আর নারকেল নাড়ু আমরা সকলে নিজেদের মধ্যে রান্নার দায়িত্ব ভাগ করে নিলাম ।প্রথমে বড় বড় হাড়ি, কড়াই, খুন্তি দেখে একটু নার্ভাস লাগছিল কিন্তু সকলের উৎসাহের কাছে তা কিছুই না।শুধু আমরা বাঙালীরাই না একই উদ্দম নিয়ে অবাঙালীরাও সমস্ত কাজে উৎসাহে সমানভাবে অংশগ্রহন করেছিল। মোটামুটি ৮০-৮৫ জনের রান্না করা হলো। সন্ধ্যা ৬ টায় পুজো শুরু হওয়ার কথা তাই বিকাল ৫ টার মধ্যেই আমরা সমস্ত রান্না করে ফেললাম। বাড়ী এসে তৈরী হয়ে আবার যখন আশ্রমে পৌঁছলাম তখন মাইকে ভেসে আসছিল সৌমেনের মন্ত্রাচারণের শব্দ। আশ্রমে পৌঁছে দেখি সেখানে উৎসাহী মানুষের ঢল নেমেছে। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ায় এত ভীড়তবে এত ভীড় সত্ত্বেও কোনো কোলাহল নেই শুধু শোনা যাচ্ছে মন্ত্রাচারণের শব্দ। এরপর শুরু হল অঞ্জলি,ও তারপরে হলো আরতি।এরপরে স্বামীজী দুর্গা পুজো সন্মন্ধে কিছু বললেন, কে কীভাবে প্রথম দুর্গা পুজো শুরু করেন। খুব কম সময়ের জন্য কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। শুধু বাচ্চারা বন্দেমাতারম গাইল। অল্প সময়ের জন্য শ্রীযুক্ত ঝাঁ মশাই এসেছিলেন ।এরপর ভোগের ব্যবস্থা করা হল৮০ জনের জায়গায় প্রায় ১১৫ জন মতো হয়ে গেল, সমস্ত কিছুই বেশ ভালোভাবে শেষ হলো।

দশমীর দিন অবাঙালীদেরও দশেরা। ওইদিন গুজরাটিরা ছোটছোট মেয়েদের পা ধুইয়ে মুছে পুজো করে বস্ত্র ও খাদ্য দান করে প্রণাম করল। এরপর আরতি হলো। শ্রীযুক্ত ঝাঁ মশাই কিছু বক্তব্য রাখলেন ।এরপর নমস্কার ও কোলাকুলির পালা ও সব শেষে ছিল মহাপ্রসাদমহাপ্রসাদের আয়োজন গুজরাটি মহিলারাই করেছিলেন । দুপুরের খাওয়া শেষ হতে জ্যোতি ঘোষণা করলেন আজ রাত্রিতে তার বাড়ীতে খাওয়া স্বামীজীকে নিয়েসন্ধ্যায় আবার আরতি হলো। আমাদের ইচ্ছা ছিল সিন্দুর খেলার কিন্তু স্বামীজী তার অনুমতি দিলেন না । এরপর মা ও তার চার পুত্র কন্যাকে বাক্সবন্দী করা হলো আবার পরের বছরের প্রতীক্ষায়। তারপর আমরা সবাই বিজয়া সেরে যে যার গন্তব্যে ফিরে গেলাম। আমাদের এই পুজো সুন্দরভাবে হওয়ার পিছনে য়ার অবদান সবথেকে বেশী তিনি হলেন স্বামীজী, তিনি ছাড়া এটা করা সম্ভব ছিল না। ফিজির ইতিহাসে এটি একটি বিশাল দৃষ্টান্ত হয়ে রইল, এত আনন্দ বোধহয় দেশের মাটিতেও করিনি




লেখিকা : শুচিস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১১ই জুলাই , ২০০৮
লাউটোকা(ফিজি)

7 comments:

Unknown said...

MASIMA KHUB SUNDOOR LIKHECHHEN...2007 PUJO CHOKHER SAMNE BHESE UTLO...THANK YOU..

Sharmila Dasgupta said...

Suchismita, tomar golpo shune boRo anondo pelam...e jeno nijer baRir pujor moto....

Anonymous said...

Boroi anonder sangbad aar lekha ta o bhishon bhalo.
Khub mangaler katha- ebar theke Fiji te Ma Durga'r anusthanik puja aarambho- jene hub bhalo lagchhe.

শারদীয়া পুস্পাঞ্জলি said...

Khub bhalo laglo ei lekhati porte; pujar saswato rupti chokher shamne dekhte pelam.
Tobe bhog rannar jaegata pore tomader khomotar proshongsha na kore parchhi na.

Shraddha.

Anonymous said...

khub bhalo laglo fijir durgapujor golpo pore.ato lokerranna korechile pore tomar khomotar prosgsha na kore parchi na.abar aro annando koro ar abar golpo likho amader jonno.

Unknown said...

Fiji r matite durgapuja r bornona pore daarun laglo.asha kori proti bochor erokom somahore ma'r pujo hobe ar sobai sob dukho bhule anonde mete uthbe.

Soma Banerjee said...

didi, tomar golpo pore nijer barir pujor katha mone pore jachhilo